রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার

Comments · 469 Views

আজ আমরা জানবো রাতে ঘুম না আসার কারণ সমস্যা ও তার সমাধান।

একটা রিসার্চ থেকে জানা গেছে যে শুধু এক রাত না ঘুমানোর কারণে আমাদের শরীর এতটাই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়ে যেটা টাইপ টু ডায়াবেটিসের সমান।  যার ফাস্ট এজিং অফ ফাস্ট বডি ফাক স্টরি নেশাতে ডাইরেক্ট কানেকশন রয়েছে।  এবার আপনি ইমাজিন করে বলুন এরকম একদিন এক মাস ১ বছর ১০ বছর অব্দি কন্টিনিউ চলতে থাকলে কি অবস্থা হবে। কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে পাবলিশ করা একটা রিসার্চ থেকে জানা যায় ঘুমের ঘাটতি ওজন কমানোর অক্ষমতার সাথে ডাইরেক্টলি রিলেটেড। দুটো গ্রুপের লোকদের নিয়ে একি ডায়েটেকি সে বিষয়ে এক্সেসাইজ রুটিন দেয়া হলো।  তাদের মধ্যে যে গ্রুপের লোকের ঘুমের ঘাটতি ছিল মানে যারা রাতে ছ ঘন্টা থেকে কম ঘুমাতেন। তারা সেকেন্ড গ্রুপ দের তুলনায় যারা কিনা রাতে ছয় ঘণ্টার বেশি ঘুমাতেন তাদের থেকে অনেক কম হারে শরীরের ফ্যাট আর ওয়েট লস করতে সক্ষম হলেন।

আশা করি আপনার বুঝতে পেরেছেন ঘুমের ঘাটতি কেন একটা বড় সমস্যা।  যেটাকে একদম ইগনোর করা চলে না।  তাহলে সমাধান কি? সেটাই আজ আপনার সাথে সন স্টিভেনসনের বই স্লিপস স্মার্টর থেকে শেয়ার করতে চলেছি যাতে আপনি খুব সহজেই স্মার্টর ফস্টার কোয়ালিটি স্লিপ এনজয় করতে পারেন।তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

রাতে ভালো ঘুম না আসার কারণ সমস্যা ও সমাধান

সমাধান ১: ঘুমানো মানে টাইম নষ্ট দিনে 8 ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটালেতো লাইফের ওয়ান-থার্ড আখানেই মিস হয়ে গেল।  ঘুম আসলে কি কেন এটা এত ইম্পরট্যান্ট। ঘুমের ডেফিনেশন জীবনের মতই অসম্পূর্ণ কেউই এটাকে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি।  তাও সাধারণ একটা সংজ্ঞার কথা বলা হলে ঘুমো হলো একটি প্রাকৃতিক পর্যায়ক্রমিক বিশ্রাম অবস্থা। যখন চোখ বন্ধ থাকে তখন চেতনা পুরোপুরি বা আংশিকভাবে হারিয়ে যায়, যাতে বাইরের কোন উদ্দীপনার উপর শরীরের সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া কম হতে পারে।

এই সংজ্ঞার থেকে বেশি ইম্পর্টেন্ট হলো এটা জানা যে ঘুমের কারণে আমাদের কি কি লাভ হয়।  যখন আপনি জেগে থাকেন ওই অবস্থাকে ক্যাটাবলিক স্টেট বলা হয়।  যেটা আপনার এনার্জি খরচ হতে থাকে।  আর যখন আপনি ঘুমিয়ে থাকেন সেই অবস্থাটাকে এনাবলিক স্টেট বলা হয় যেখানে আপনি এনার্জি আপনার ভেতরে সংগ্রহ করতে থাকেন।  হাই কোয়ালিটি স্লিপিং আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম স্ট্রং বানায়।  হরমোন ব্যালেন্সিং এ সহায়তা করে। মেটাবোলিজম কে বুস্ট করে এনার্জি বাড়ায় এবং ব্রেনের ফাংশন গুলোকে ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করে।

আপনি যদি একবার সঠিক ভাবে ঘুমানো শুরু করেন তাহলে আপনি যে জীবনটা পাবেন।  হান্ডেট পার্সেন্ট কনফিডেন্সের সাথে বলা যেতে পারে আপনি সেই অনুভূতি টাকে কখনোই কোনো পরিস্থিতিতেই হাতছাড়া করতে চায়বেন না।

সমাধান ২: একটা ভালো ঘুম হওয়ার জন্য সবথেকে যেটা বেশি ইম্পর্টেন্ট সেটা হল মেলাটোনিন নামে একটা হরমোনের বডিতে সাধারণভাবে ক্ষরণ হওয়া।  ব্রেনের পিনিয়াল গ্ল্যান্ড থেকে মেলাটোনিন নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়।  যেটা আমাদের শরীরে স্লিপ সাইকেলকে মেইনটেন করার জন্য মস্তিষ্ককে সংকেত পাঠায়।  মেলাটোনিনের ক্ষরণ লাইট এক্সপ্লজারের সাথে ডাইরেক্টলি রিলেটেড।  দিনে যত বেশি সম্ভব আলোর মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন রাতে যত কম সম্ভব আলোর সম্মুখীন হওয়ার চেষ্টা করুন।  আর দেখুন কিরকম ম্যাজিকের মতো আপনার ঘুমের কোয়ালিটি ইমপ্রুভ হয়।


সমাধান ৩: রাতে ভালো ঘুমানোর জন্য এবং আপনার ঘুমের পরিমান ঠিক করার জন্য আপনি এখনই যদি কিছু করতে পারেন তো সেটা হলো আরটিফিসিয়াল ব্লু স্ক্রিন যেমন মোবাইল, টিভি, লাপটপ এগুলোকে এভয়েড্ করা।  এটা আপনার বডিতে ডে-টাইম হরমোন যেমন কর্টিজম হরমোন কনফিগার করে দেয়।  যেটা আপনার ঘুমে ন্যাচরাল ডিপ্রেশনের প্রভাব ফেলে।  যদি আপনি একটা গভীর ঘুম পেতে চান যেটা কিনা খুবই দরকার, তাহলে শুতে যাওয়ার কম পক্ষে এক ঘন্টা আগে এই সব স্ক্রীন গুলোকে বন্ধ করে দিন।  যদি আপনি এটা না করেন, আর সারারাত ধরে বসে চ্যাট করা বা গেম খেলতে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বিপদ কে নিজেই নিজের মধ্যে বসবাস করার সুযোগ করে দিচ্ছেন ধীরে ধীরে।  যার ক্ষতি মারাত্মক হতে পারে।

সমাধান ৪: “ইউজ ব্লু লাইট ফিল্টার” কোনো কোনো সময় এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন কিনা রাত জেগে কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে কাজ করতে হতে পরে।  এখানে ঘুমের জন্য টেকনোলজি আপনার কাজে আসবে। আপনার পি.সি. বা মোবাইলে একটা ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপ বা স্ফটওয়্যার ইন্সটল করে নিন।  যেটা অটোমেটিকেলি সন্ধ্যা আটটা বাজার পর ই অন হয়ে যায়।  আর সব প্রবলেমেটিক ব্লু লাইট গুলোকে মোবাইল স্ক্রিন থেকে ফিল্টার আউট করে দেয়।  যদি আপনি সুন্দর ঘুম পেতে চান সব থেকে ভালো হবে সব স্ক্রিন গুলোকে এভোয়েড করা।

সমাধান ৫:  “এভোয়েড ক্যাফিন” ক্যাফিন একটা খুব পাওয়ারফুল নার্ভাস সিস্টেম স্টিমুলান্ট যদি আপনার নার্ভাস সিস্টেম অফ হয়ে যায় তাহলে তো আপনি ভালো ঘুম পাওয়ার কথা ভুলেই যান।  এই জন্য বিকাল চারটে বাজার পর চা, কফি, কোলড্রিংস এগুলো সব সময় এড়িয়ে চলার এবং এগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।  যাতে করে তার আগে আপনি যদি এগুলো পান করে থাকেন তাহলে আপনার বডি কিছুটা সময় পাবে এগুলোকে শরীর থেকে বাইরে বার করে দেওয়ার।

সমাধান ৬: আমরা অনেক সময় গরম কালে ইলেকট্রিক বিল বাঁচানোর চক্করে আমারা ঘড়ের বড় ফ্যান বন্ধ করে দিয়ে ছোট সিলিং ফ্যানটা চালিয়ে দেই।  আর এদিকে গরমে ঘামতে শুরু করি। যেটা কোয়ালিটি ঘুমের জন্যে ভালো না।  সামথিং কল থার্মরেগুলেশন আমাদের শরীরে স্লিপ সাইকেল কে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে।  ঘুমানোর সময় আমাদের শরীরে অটোমেটিকলি টেম্পারেচার ফল হতে থাকে।  কিন্তু পরিবেশে টেম্পারেচার খুব বেশি হলে তাহলে সেক্ষেত্রে একটা গভীর ঘুমের মধ্যে প্রবেশ করাটা একটু মুশকিল হয়ে পড়ে।  একটা রিসার্চ থেকে জানা গেছে ২০° উষ্ণতা একটি ভালো ঘুমের জন্য একদম পারফেক্ট কিন্তু ১২° থেকে কম বা ২৩° বেশি উষ্ণতা গভীর ঘুমের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সমাধান ৭: একটা রিসার্চ থেকে জানা গেছে মানুষের শরীরের সব থেকে ভাল রিকভারি হরমোনগুলো ক্ষরিত হয় রাত ১০টা থেকে রাত দুটো এর মাঝে ঘুমানোর সময়।  এরপর আপনি যতটা সময় ঘুমান সেটা বোনাস। কারণ আমাদের পূর্বপুরুষরা সূর্য ডোবার কিছু সময় পরেই ঘুমাতে চলে যেতেন।  আর তাদের থেকে বিবর্তিত হয়ে আমরা তৈরি হয়েছি।  এখন আমরা আর্টিফিশিয়াল রাতকে দিনের থেকেও বেশি আলোকিত করে তুলতে পারি।  আমরা চাইলেই এই বিষয় টাকে ইগনোর করে রাত তিনটে অব্দি ল্যাপটপ নিয়ে সময় অতিবাহিত করতে পারি, চ্যাট করতে পারি, মুভি দেখতে পারি। কিন্তু এটা একদম উচিত নয়।

প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা কহখনও উচিত না।আমাদের মানুষদের এরকমই ডিজাইন করা হয়েছে যে অন্ধকার হলে যাতে আমরা রেস্ট নিই। কিন্তু তবু যদি আমরা এই নিয়ম কে দিনের পর দিন এড়িয়ে চলছি।  এই সব থেকে আমরা বিরত থাকবো এবং নিজেদের সাজেস্ট করবো আবার একবার নতুন করে ভেবে দেখার।  আর নিজেদের ভালো মন্দ গুলোকে এডজাস্ট  এডজাস্ট করার।

সমাধান ৮:  আই হ্যাভ এ বেডরুম: আরে বেডরুমতো সবারই থাকে। বেডরুম মানে সেই বেডরুম যা শুধুমাত্র দুটো কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।  প্রথম হল ঘুম আর আর দ্বিতীয়টা হলো না সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেন আপনারা হয়তো বুঝে গেছেন।  কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোক নিজের বেডরুমটাকে নিজের আমোদ-প্রমোদের জায়গা বানিয়ে নেয়।  লোকজন তো আজকাল বিছানায় শুয়ে টিভি দেখতে থাকে। যেটা স্লিপ সুইসাইডের থেকে কিছু কম নয়।  যদি কেউ সত্যি একটি ভালো মানের ঘুমের অভিজ্ঞতা অনুভব করতে চায়, তাহলে কখনো কোন কাজকে বেডরুমে নিয়ে আসা উচিত নয়। মানুষ অভ্যাসের দাস আর অভ্যাস করলে সব কিছু সম্ভব।

বাচ্চারা তার মায়ের মুখে ঘুম পাড়ানি গান শুনে ঘুমিয়ে পড়ে। যদি আপনি আপনার বেডরুমে এরকম একটা এনভারমেন্ট গড়ে তোলেন।  যেখানে বিবিধ কাজকর্ম চলে তাহলে আপনি সেই নিউরো অ্যাসোসিয়েশন টা বানাতে ব্যর্থ হন যে যখন আপনি আপনার বিছানায় শুয়ে আছেন তখন সেটা ঘুমের সময়।  আপনি হয়তো বলতে পারেন আমি কি বাচ্চা নাকি।  কিন্তু আসলে আমরা সবাই শুধু সাইজে বড় বাচ্চাই। যাদের প্রোগ্রামিং একদম সেম।  নিজের বেডরুমকে একটা সুন্দর পবিত্র জায়গা বানান যেখানে শুধু শান্তি প্লাবিত হয়।  এতে আপনার বেডরুমে আসা মাত্রই আপনি খুব সহজে গভীর ঘুমে ডুবে যেতে পারবেন।

সমাধান : অনেক সময় এরকম হয় রাতে লাইট অফ করে বিছানায় শোয়ার পর হঠাৎ যেন সব ইম্পর্টেন্ট কাজগুলো মাথায় ঘুরতে শুরু করে দেয়।  রাতে বিছানায় শোয়ার পরই আমরা যেন দার্শনিক হয়ে উঠি।  দুনিয়ার সব কথা কেন কি করে কেমন করে এই সব মাথায় ঘুরতে থাকে।  এই প্রবলেম টিকে ইনচ্যাটার বলা হয়। এই ইনোচ্যাটারের আসল কারণ হলো স্ট্রেস। কিন্তু চিন্তার কোন কারণ নেই সমস্যা থাকলে তার সমাধানও আছে।  আর এই সমস্যার সমাধান হলো মেডিটেশন।  মেডিটেশন একটা টনিকের মতো যেটাকে আপনি চাইলে রেগুলার ব্যবহার করতে পারেন।  শুতে যাওয়ার আগে শুধু এই পাঁচ মিনিটের মেডিটেশনও আপনাকে অনেক বেশি ঘুমের সাহায্য করতে পারে।


অনেক রিচার্স থেকে জানা গেছে মেডিটেশন আমাদের শরীরে অনেকগুলো ফিল-গুড হরমোন আর এন্ড্রোফিনস ক্ষরিত করতে সাহায্য করে।  আর ট্রেস হরমোন যেমন কর্টিসেল হরমোন হ্রাস করে।  আপনি অন্য কোন জিনিস ব্যবহার করে আপনার শরীরে এসব কাজ করাতে পারেন।  কিন্তু সেটা খুব ব্যয়বহুল হবে যেখানে মেডিটেশন একদম ন্যাচরাল আর ফ্রী।

সমাধান ১০: নিজের ঘুমের কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করার জন্য যদি আপনি সত্যিই ইফেক্টিভ কিছু করতে পারেন তাহলে সেটা হল সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা।  যেমন আমরা সবাই জানি মানুষের ঘুমের জন্যও একটা ঘুমের প্যাটান অলরেডি ডিজাইন করা রয়েছে।  সকালে তাড়াতাড়ি ওঠাই আপনি আপনার ইন্ডক্লিন সিস্টেমকে ঐ প্যার্টান এর সাথে সঠিকভাবে লিঙ্ক করতে সফল হন।  যাতে আপনি কর্টিসল আর মেরোডনিনের প্রাকৃতিক ক্ষরণের সুবিধা নিতে পারেন।


➫ এই স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্টটি আপনার  উপকারে আসলে অপরকেও শেয়ার করে সাহায্য করুন। সকলের সু-স্বাস্থ্য কামনা করি ধন্যবাদ।

 

Comments